এলাকার আধিপত্য ধরে রেখে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ সংগঠনের উদ্দেশ্যে রাজধানীর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে যুবলীগ নেতা মো. সাইফুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা হয়। তবে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। এ ঘটনায় সাইফুলের স্ত্রীর করা মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ (ডিবি)।
তারা হলেন, মো. মনিরুজ্জামান সুমন ও মো. ইমন।
শুক্রবার কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার আমড়াতলী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান উদ্ধার হওয়া অস্ত্র দুটির একটি বাংলাদেশে তৈরি, অন্যটি ভারতের। একাধিক হাত ঘুরে অস্ত্র দুটি সন্ত্রাসীদের হাতে এসেছে।
ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম বলেন, এলাকার আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে জানা যাবে।
শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, গত ১৫ মে সন্ধ্যায় খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে রেমন্ড টেইলার্সের সামনের রাস্তায় মনিরুজ্জামান সুমন ও তার সহযোগীরা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ সাইফুল নিজেই একটি সিএনজিতে উঠে ঢাকা মেডিকেলে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার চিকিৎসা করেন। ঘটনার সংবাদ পেয়ে তার স্ত্রী ও আত্মীয়রা ঢাকা মেডিকেলে যায়। এ ঘটনায় গত ১৬ মে সাইফুলের স্ত্রী সবুজবাগ থানায় নয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগীর স্ত্রীর অভিযোগের ফলে সবুজবাগ থানায় একটি মামলা রুজু হয়। এ মামলা তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যমতে রাজধানীর খিলগাঁও থানার ত্রিমোহনী এলাকা থেকে দুটি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যমতে সাইফুল ইসলাম, কচি, রিপন ও সুমন ছোটবেলার বন্ধু ছিল। তারা একসঙ্গে রাজনীতি শুরু করে। সাইফুল দলীয় পর্যায়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পায়। রিপন ও সুমন দলীয় পর্যায়ে পদ না পাওয়ায় তাদের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরে। এরপর থেকে তারা পৃথক পৃথক গ্রুপ তৈরি করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে থাকে। ‘রিপন গ্রুপ’র সদস্য বাশারকে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলার এক নম্বর অভিযুক্ত ছিল ভিকটিম সাইফুল। সে এই মামলায় দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে সুমন গ্রুপ এলাকায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ করতে থাকে। ভুক্তভোগী সাইফুল জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সুমন গ্রুপ ও রিপন গ্রুপের এলাকায় আধিপত্য কমে যায়। পরে তারা দুই গ্রুপ এক হয়ে ভুক্তভোগী সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনায় দিন রিপন, কচি, সুমন ও ইমনসহ ১২ থেকে ১৩ জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় রিপন সাইফুলকে দু রাউন্ড এবং গ্রেপ্তার সুমন এক রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, এ মামলায় এজাহারনামীয় মোট নয় অভিযুক্তের মধ্যে মো. মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে কচি, রাসেল তালুকদার ওরফে চাপাতি রাসেল, মো. উজ্জ্বল তালুকদার ও মো. আমির হোসেনকে এর আগে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় পলাতক রিপনসহ অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।
গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা রুজু হয়েছে।
Leave a Reply